Monday, December 15, 2014

জার্নাল ক্লাব


গত সপ্তাহে আমার গাইড একটি ইমেল করে ল্যাব এর সকলকে জানালেন যে, আমাদের গবেষণা সংক্রান্ত একটি খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘Science’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছেআগামী সপ্তাহে সকলে মিলে সেই প্রবন্ধটা নিয়ে আলোচনা করা হবেআমি মেইলটি দেখলাম এবং এক মুহূর্ত পরেই সেটা সম্পূর্ণ ভুলে গেলামতার মানে এই নয় যে, আমি আমার গবেষণার ব্যপারে একেবারেই উদাসীন, কিন্তু কাজের বাইরে হাজার রকমের অকাজ নিয়ে আমার উত্‍সাহ ঢের বেশি
সামনের উইকএন্ডে কোথায় ভালমন্দ খাওয়া যেতে পারে...সেটা রেস্টোরান্টই হোক অথবা কোনও বন্ধুর বাড়ি...কোনও কিছুতেই আমার আপত্তি নেই...খালি আমাকে রান্না না করতে হলেই হল...:)॥ভাল খাওয়ার সঙ্গে একটা ভাল আড্ডা মারার গ্রুপ যদি যোগাড় করা যায়...ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় নিয়ে আমার মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটি এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, ‘Science’ এর প্রবন্ধটি নিয়ে আলোচনা সভার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। মনে পড়ল, ঠিক আগের দিন বিকেলে। তাও আবার আমার একজন labmate কে প্রবন্ধটি পড়তে দেখে

আর বেশি কিছু বলার আগে এই প্রবন্ধ সভা সম্পর্কে একটু বলা দরকারএই বৈজ্ঞানিক আলোচনা সভার আমাদের ল্যাবে পোশাকী নাম হল "জার্নাল ক্লাব'সভার অধিবেশন পরিচালনা করেন, আমার গাইডকখনো তিনি নিজেই সমগ্র প্রবন্ধটির সারমর্ম আমাদের সামনে তুলে ধরেন, আবার কখনো আমাদের, মানে তার ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ (পড়ুন আদেশ) করেন, ব্যাপারটা প্রাঞ্জল করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য....আর সেখানেই হচ্ছে আসল বিপদসভাপতি যদি আমাকে সেই গুরুদায়িত্ব দিয়ে বসেন, সেই ভয়ে আমাদের প্রবন্ধটি আগেভাগেই পড়ে, তার মর্ম উদঘাটন করে রাখতে হয়...অতএব আগের দিন বিকেলে যখন আমার হুঁশ ফিরলো...ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে...
যাই হোক, সেদিন রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত জেগে থেকে, ফেসবুক, whatsapp, Gtalk, সব কিছুর প্রলোভন বর্জন করে, অনেক কষ্টে অর্ধেক প্রবন্ধের মর্মদ্ধার করে আমি ক্ষান্ত দিলাম।
পরের দিন, ল্যাবে গিয়ে একে একে সকলকে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, যে কে কতখানি পড়েছে?...মানে পরোক্ষভাবে আমি নিজের দল ভারী করতে চাইছিলাম যে, ফাঁকিবাজ খালি আমি একা নয়।...সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করলো যে, তারা মোটেও সম্পুর্ন প্রবন্ধটা পড়ে উঠতে পারেনি। আমি তো বেজায় খুশি, কেউই যদি না পড়ে থাকে, তাহলে খুব একটা চাপ নেই।...কিন্তু আমার এই আনন্দ অচিরেই বুদ্বুদ এর মতো মিলিয়ে গেল...যখন সভাপতি সকলকে একে একে প্রবন্ধের একেকটি অংশ এক্সপ্লেন করতে বললেন। আর তখনই আমি আবিষ্কার করলাম যে, কেবল আমি ছাড়া বাকি সকলে বেশ ভালমতই পড়া তৈরি করে এসেছে.... পড়া না পারার থেকেও, বন্ধুদের পড়া তৈরি করেও আমাকে মিথ্যা প্রবোধ দেওয়ার দুখে আমি বেশি কাতর হয়ে পড়লাম। সবাই আমার কাছে মীরজাফর হিসেবে প্রতিপন্ন হল। আলোচনা সভার শেষে, এক ডজন গোল খাওয়া গোলকীপার এর মতো মুখ করে বাড়ির পথ ধরলাম

ট্রেনে উঠে একটি জানলার ধরে জায়গা পেয়ে বসে পরলাম, বাইরে ততক্ষণে সুয্যিমামা  সমস্ত গাছপালা, বাড়িঘর, মাঠঘাট সোনালী আলোয়ে ডুবিয়ে পাটে বসেছেন...ট্রেন ছুটে চলেছে...আর আমি ঠিক সেই সময় টাইমমেশিনে চেপে ফিরে চলেছি আমার ছোটবেলায় স্কুলে পরীক্ষার দিনগুলিতে।
মনে আছে, স্কুলে আমার কিছু বন্ধুর কথা...যারা সব পরীক্ষার শেষেই দুখী দুখী মুখ করে আলোচনা করত যে তাদের পরীক্ষা কত সাংঘাতিক খারাপ হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্রশ্নের কোনও উত্তরই তারা লিখতে পারেনি।কোনও রকমে হয়ত টেনেটুনে পাশ করবে...কিন্তু একটু শক্ত দিদিমনির হাতে খাতা পড়লে, তারা পাশ নাও করতে পারে। আমার তখন বন্ধুদের জন্য মন খারাপ করত। আর আমি নিজে কেন ওদের থেকে বেশি প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেললাম, সেইজন্য নিজেকেই মনে মনে অপরাধী ঘোষণা করতাম। কিন্তু রেজাল্ট বেরলে দেখা যেত, আমার সেইসব বন্ধুরা বেশ ভাল নাম্বার নিয়েই পাশ করেছে...আর আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে মায়ের কাছে বকা খাচ্ছি আর পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটিতে গর্ত করছি।
সেই ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমার কিছুতেই মাথায় ঢোকে না, যে ভাল পরীক্ষা দিয়ে, “আমার পরীক্ষা খুব খারাপ হযেছে” এটা বলার কারণ কী?
আর একটা মজার ঘটনা মনে পড়ল...ক্লাস বোধহয় তখন সেভেন...অ্যানুয়াল পরীক্ষার সব থেকে শেষ পরীক্ষা...অংক পরীক্ষা...কোয়েশ্চান পেপার বেশ কঠিন হযেছে....আসল অঙ্কের থেকে, মার্জিনের ডান দিকে রাফ করছি বেশি।সতর্ক পাহারা দিছেন তনুশ্রী দি। এদিক থেকে ওদিকে ঘাড় ঘোরানোর উপায় নেই।...পরীক্ষা যত শেষের দিকে এগিয়ে আসছে, তত হলের মধ্যে উশখুশনি বেড়েই চলেছে....মাঝে মাঝে সোনা যাচ্ছে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না..... ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমশই পিছিয়ে পারছি...অবশেষে বেজে গেল ওর্নিংবেল আর তার ঠিক পনের মিনিট পরেই ফাইনাল ঘণ্টা....খাতা চলে গেল  দিদিভাই এর জিম্মায।
চাঁদা, কাঁটাকম্পাস্স, পেন্সিলকম্পাস্স গুছিয়ে নিলাম...মনে মনে হিসাব করে দেখলাম...মোটামুটি পাশ করে যাব। যাই হক, পরীক্ষা মোটামুটি হওয়ার দুখের থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আনন্দে আমি বেশ হাসি হাসি মুখ করেই বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু স্কুল কম্পাউণ্ড এর বাইরে বেরিয়ে বুঝলাম, অবস্থা বিশেষ সুবিধের নয়।...আমার অনেক বন্ধুই মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে...কাকিমারা যতটা সম্ভব সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন...আর দূরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আমার মা একরাশ উদ্বেগ মাখা মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মায়ের কাছে যেতে মা পিঠ থেকে ব্যাগটা নিয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলেন. “কী রে বাবু, কেমন হল?”..আর আমি যথারীতি বোকার মতো বলে ফেললাম “ভালো”...খুব জোরে যদিও বলিনি...তবে ভালো পরীক্ষা দিয়ে যে  চুপিচুপি বলতে হবে, এটা তখন আমার মাথায় আসেনি। আর যেই না বলা, অমনি আশেপাশের সব কাকিমা দের চোখ ঘুরে গেল আমার দিকে...সকলের চোখের ভাষা আমি পড়তে না পারলেও আমার মা ঠিকই বুঝে ছিলেন যে, ওখান থেকে মানে মানে আমায় নিয়ে সরে পরা উচিত। অগত্যা মায়ের হাত ধরে হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে...মনে পরীক্ষা শেষের ফুর্তি...ছুটিতে কোথায় যাব, সকালে কত দেরি করে ঘুম থেকে উঠবো, এইসব সাত পাঁচ ভাবছি...হঠাত্‍ দেখি, আমার মা এর মুখখানা শুকনো...তড়িঘড়ি  জিজ্ঞাসা করি, মা তুমি কী আমার পরীক্ষা খুব ভাল না হওয়ায় রাগ করেছ?...মা একটা ছোট্ট নিশ্বাস গোপন করে বলল নারে বাবু, তুই যতটা পেরেছিস লিখেছিস...কিন্তু আমার চিন্তা অন্যখানে...এই যে এত বড় হয়েও তুই এখনো কোথায় কী বলতে হয়, কিভাবে বলতে হয় সেটা শিখলি না..!!!বোকা মেয়ে তুই একটা

মাযের  কথাগুলো এত দিন পরে আবার মনে পড়ে গেল। স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটি পেরিয়ে বুড়ো হতে চললাম ....এরকম নয় যে আমি এখনো ওই একিরকম ক্যাবলা আছি...কিন্তু আমার কপাল মন্দ...যদি আমি বেশি চালাকি করে কোনও দিন ভালো পরীক্ষা দিয়েও বলি খারাপ পরীক্ষা দিয়েছি, বা কোনও দিন পড়া তৈরি করে ভালো মানুষের মতো বলি যে...আমি বই এর মলাটটা উল্টেও দেখিনি...তাহলে সত্যি সত্যি আমার পরীক্ষা খুব খারাপ হয় বা আমি দিদিমণিদের কাছে বকা খাই....কী আর করা যাবে?...বন্ধুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই....আমারও নন্দলালের মতই মন্দকপাল।        

Saturday, September 20, 2014

হোককলরব

আমার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে যে আমি মানুষটি বড়ই ভীতুমনে মনে যাই ভাবি না কেন, মুখ ফুটে বলতে আমার বড়ই কষ্টভালোলাগা, মন্দলাগা কোনও কিছুই ঠিক মতো প্রকাশ করে উঠতে পারিনা। কিন্তু মুখে প্রকাশ না করলেও, নিজে বেশ ভালই জানি যে আসলে ঝামেলা নামক ব্যাপারটা আমার বড়ই অপ্রিয়।কারো সঙ্গে গলা তুলে কথা বলতে গেলে আমার বুক ধরফর করে।আমার কোনও কথায় কারো মুখ কালো হলে, লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করে।আর এরকম করতে করতে,একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলুম যে আমি কী ভাবি, কী ভালবাসি না বাসি তার থেকে অন্যেরা কী ভাবে সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গ্যাছে।এর জন্য আর কেউ দায়ী নয়, দায়ী একমাত্র আমি নিজে। ছোটবেলায় যেদিন খেলতে গিয়ে, কিছু বিচ্ছু ছেলেমেয়ের হাতে কয়েক ঘা খেয়ে বাড়ি ফিরলাম, তার পরদিন থেকেই আমি খেলতে যাওয়ার সময় হলেই লুকিয়ে পড়তাম। উল্টে ওদের একটা গাট্টা দেওয়ার কথা আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার এক দূরদর্শী জ্যেঠু আমার কান্ডকারখানা দেখে খুব অল্প বয়সেই আমার নাম রেখেছিলেন ঢ্যারশ।আমি আজও প্রতি পদে পদে সেই নামকরণের সার্থকতার প্রমাণ দিয়ে চলেছি।
যাই হোক, যা বলছিলাম, ভীতু মানুষদের একটা খুব বিচ্ছিরি স্বভাব হচ্ছে যে, সে নিজে যেটা করতে পারে না, সেটা অন্য যদি কেউ করতে পারে, তাহলে মনে মনে সেই সাহসী মানুষটার কেনা হয়ে থাকে। কিন্তু মুখে বাহবা জানাতেও ভয়/লজ্জা পায়
দিন কয়েক আগে, যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় #হোককলরব শুরু হল, তখন(আসল ঘটনাটা জানার আগেই)মনে মনে ভেবেছিলাম, এই হয়েছে সব আজকালকার ছেলেমেয়ের দল!!কথা নেই বার্তা নেই, অবরোধ, ক্লাস বয়কট, মিটিং মিছিল..ধুততেরি ... রাজনীতি রাজনীতি করেই বাঙালির আর কিছু হল না...মনে মনে এদের গুষ্টি উদ্ধার করে (মুখে বলার সাহস আমার কোনও কালেই ছিল না)আবার নিজের গতানুগতিক জীবনের চরকায় তেল দিতে লাগলাম।ভেবেছিলাম, কয়েক দিন পরেই তো দুর্গাপুজো, সব আবার যেকে সেই....তখন তো আবার KFCতে বসে মুরগির ঠ্যাং চিবতে চিবতে শাহরুখ খান এর সিনেমা নিয়ে আলোচনা করবি.....পুজোয় হাল ফ্যাশন এর জামাকাপড় পরে, বিশেষ বন্ধুবান্ধবীদের হাত ধরে ঠাকুর দেখবি, ....মাঝখান থেকে খালি রাজনৈতিক দলগুলির মিডিয়ার footage খাওয়ার আর পরস্পরকে গালাগাল দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।  
কিন্তু হাওয়াটা যত জলদি থামবে মনে করেছিলাম, তা ঠিক হল না।বরং উল্টে দিনে দিনে আমার virtual জগতের বন্ধুদের দেওয়াল ধিক্কার, রাগ আর অন্ধকারে ছেয়ে গেল।যদিও আমার virtual বন্ধুদের সকলকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব ভাল চিনি না, কিন্তু যাদের সঙ্গে সত্যিকারের পরিচয় আছে, যাদের বিচার বুদ্ধির উপর বেশ কিছুটা আস্থা আছে এবং যারা আমারই মতো রাজনীতি থেকে শতযোজন দূরে থাকতে পছন্দ করেন,তারাও যখন একে একে এই কলরবে গলা মেলালেন, তখন কেমন জানি হিসাবটা একটু গুলিয়ে গেল।  
আমার মতো ভীতু মানুষরা আবার সাংঘাতিক হিসেবী হয়, জানেন তো!! সব কিছু বাঁধা ছকে না পড়লে, কেমন যেন একটু অস্বস্তি হয়। অগত্যা হিসাব মেলাতে, অনিচ্ছাসত্তেও কলরবে কান পাততেই হলো। আর তরপরেই আমার আর কিছু মনে নেই।


এ কী করেছে এরা? সমাজের ক্ষমতাবান মানুষেরা, ক্ষমতাহীন মানুষগুলোকে শোষণ করবে,আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেবে, মেয়েদের সম্মান নষ্ট হলে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে, ধর্ষক নয়, ধর্ষিতকেই দিনের পর দিন অপমান সহ্য করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলি আমাদের ক্ষতের আগুনে নিজেদের সুবিধেমত হাত সেকবে ..এগুলোর সঙ্গে তো আমরা অনেকদিন আপোষই করে নিয়েছি।হঠাত্‍ কী হল বলুনতো সবার? বাচ্চা থেকে বুড়ো, রাজনৈতিক রঙ নির্বিশেষে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছে...বলি হচ্ছেটা কী?...কী যে হচ্ছে ঠিক জানিনা...কিন্তু আমার মতো সব সময় ভয় পাওয়া একটা মানুষের ভিতরে ভিতরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে (প্রকাশ করতে ঠিক সাহস পাচ্ছিনা)। যেসব পাকা পাকা ছেলেমেয়েগুলোকে একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম যারা একদম গোল্লায় গ্যাছে, তারাই কিনা আজকে এতগুলো মানুষকে একসূত্রে বেধেছে, তাদের এত ক্ষমতা!!! ওদের আজকে সমাজের উপরতলার খবরদাররা ভয় পাচ্ছে!!! বাঙালি যে খালি চায়ের কাপে তুফান তুলেই ক্ষান্ত হয় না, এটা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে...হাজার হাজার মাইল দূর থেকে তাই যেন ওরা একটা আজন্ম ভীতু মানুষকেও একটু সাহস যোগাচ্ছে। জানিনা ওদের এই আন্দোলনের ভবিষ্যত্‍ কী?জানিনা সময়ের স্রোতে একসময় এই উত্তাপ হারিয়ে যাবে কিনা....কিন্তু এই মূহুর্তে ওরা হাজার সূর্যের আলো হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি সেই আলোর একটুখানি নিজের জন্য ধার করে নিলাম। 

Wednesday, February 26, 2014

bangla dharabahik



ব্যাঙ্গালোরে প্রায় প্রচুর বাঙালি থাকার সুবাদে আজকাল প্রায়ই এখনকার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে বাংলা সিনেমা দেখানো হয়কিছুদিন আগে সেরকমই একটি সিনেমা জাতিস্মর দেখতে যাওয়া হয়েছিল আর সেই সিনেমা দেখতে গিয়ে একটি অদ্ভুত realization হলনা সিনেমার মূল গল্পের সঙ্গে এর কোনই সম্পর্ক নেই সিনেমায় RJ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় র মা মমতা শঙ্কর, তিনি মধ্যবয়সিনী, স্বামীকে হরিয়েছেন, কিন্তু সিনেমায় she has been designated as “Bindaas বিধবাআধুনিক সংস্কৃতি মনষ্ক মানুষ বলেই তাকে সিনেমায় চিত্রিত করা হয়কিন্তু যখন তিনি মেয়েকে বলেন জলসা চ্যানেলটা ধরতে, to watch “তোমায় আমায় মিলে” তখন কেমন যেন একটা কানে লাগেযতদূর জানা আছে, তাতে ওই সিরিয়ালটির বিষয়বস্তু আর যাই হোক না কেন, কোনও মতেই মমতা শঙ্করের সিনেমার চরিত্রটির সঙ্গে খাপ খায় নাতবুও তিনি ওই সিরিয়ালটি নিয়মিত দ্যাখেন
যতদূর জানা আছে, বিভিন্ন বাংলা চ্যানেলে যে সমস্ত সেরিয়ালগুলো বিশেষ জনপ্রিয়, তাদের বেশীরভাগেরই বিষয়বস্তু মোটামুটি একইরকমশাশুড়ি-বউ র তিক্ত-মধুর সমাপরক, গ্রামের সরল সিধে মেয়ের শহুরে বড়লোকএর ছেলের সঙ্গে প্রেম এবং তার পারে হাজার একটা complications, একটি ছেলের গণ্ডা দশেক বউ....কারো বা হয়তো মা হারিয়ে গাছে. আর গত বিশ বছর ধরে সে তার মাকে খুঁজে চলেছে..।
আমার একজন কাকিমা আছেন, যিনি ওই সিরিয়াল চলাকালীন বাড়িতে লোকজন আসা একেবারেই পছন্দ করেননা এমনকি বাড়ির ফোনটা পর্যন্ত নামিয়ে রাখেন। আমার মাকে যতদূর চিনি, মা কোনও দিনই সিরিয়ালের পোকা ছিলেন নাকিন্তু এখন যখন রোজ সন্ধেবেলা বা রাতের দিকে বাড়িতে মাকে ফোনে করি.....তখন বেশ বুঝতে পারি আমার মাও এইসব সেরিয়ালগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগে...
তাই গতবার কলকাতায় গিয়ে মাকে জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম...কী ব্যাপার বলত?...তুমি আবার এতো সিরিয়াল এর ভক্ত হলে কবে থেকে?....মা র সরল উত্তর: কী করব সরদিন বাড়িতে একা একা?তাই TVটা চালিয়ে রাখি..।
মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজ কর্মসূত্রে আমার মায়ের মেয়ে বাইরে থাকে। নিজেদের জীবন নিয়ে, নিজেদের জগত্‍ নিয়ে আমরা ভিশন ব্যস্তদিনের শেষে তাই ফোনে আথবা স্কাইপ এ দুটো কথাকিন্তু আমার মা যে ভীষণ একাসারাদিন ওই কয়েকটা মিনিট কথা বলার অপেক্ষা করতে করতে কখন যেন আমার মা নিজের অজান্তেই ওই তথাকথিত বস্তাপচা ফ্যামিলি ড্রামার স্বরণাপন্ন হয়ে পরেছে